Type and Search the content here ...

বাংলা ব্যাকরণ

গ্রিক শব্দ "Grammar" এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো ব্যাকরণ, যার অর্থ হলো - ‘শব্দশাস্ত্র’। ‘ব্যাকরণ’ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দাড়ায় বি+আ+কৃ+অন এবং ব্যাকরণ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। আর যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার নানা উপাদানের প্রকৃতি এবং স্বরূপের বিচার ও বিশ্লেষণ করা হয় এবং যে শাস্ত্রে বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচনা করা হয় সেই শাস্ত্রকে বাংলা ব্যাকরণ বলে।

ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি সব দিক আলোচনা করে বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাকে বলে বাংলা ব্যাকরণ। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’মতে “যে শাস্ত্র জানিলে বাঙ্গালা ভাষা শুদ্ধরুপে লিখিতে, পড়িতে ও বলিতে পারা যায়, তাহার নাম বাঙ্গালা ব্যাকরণ।

ধ্বনি

ভাষার ক্ষুদ্রতম একক ধ্বনি। কোনো ভাষার উচ্চারিত শব্দকে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে তার যে অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম অংশ পাওয়া যায়, তা-ই ধ্বনি। ব্যাকরণ শাস্ত্রে মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত শব্দ বা আওয়াজকেই ধ্বনি বলা হয়। বস্তুত অর্থবোধক ধ্বনিসমূহই মানুষের বিভিন্ন ভাষার বাগ্‌ধ্বনি। ধ্বনিই ভাষার মূল ভিত্তি।


বিভিন্ন বিষয়ের একক


বিষয় একক
  মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম       ভাষা  
শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশধ্বনি
ভাষার মূল উপকরনবাক্য
ধ্বনি নির্দেশক প্রতীকবর্ণ
ভাষার মৌলিক উপাদানশব্দ
বাগযন্ত্রের সল্পতম প্রায়াসে উচ্চারিত শব্দাংশঅক্ষর
ভাষার মূল উপাদানধ্বনি
ভাষার ক্ষুদ্রতম এককধ্বনি
বাক্যের মৌলিক উপাদানশব্দ
বিভক্তিহীন নাম শব্দপ্রাতিপদিক
ক্রিয়ার মূলধাতু

ধ্বনির পরিবর্তন

ভাষা পরিবর্তনশীল। ভাষার পরিবর্তন ধ্বনির পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত। উচ্চারনের সময় সহজীকরণের প্রবণতায় শব্দের মূল ধ্বনির যেসব পরিবর্তন ঘটে তাকে ধ্বনির পরিবর্তন বলে। ধ্বনি পরিবর্তনের উদাহরন নিম্নে উল্লেখ করা হলো :


নামসংজ্ঞাউদাহরন
আদি স্বরাগম উচ্চারনের সুবিধার জন্য বা অন্য কোন কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে বলা হয় আদি স্বরাগম। স্ত্রী > ইস্ত্রী, স্কুল > ইস্কুল, স্নেহ > ইসˎনেহ, স্টেশন > ইস্টিশন ইত্যাদি
মধ্য স্বরাগম, স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ সময় সময় উচ্চারনের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনির আগমন ঘটে। স্বরধ্বনির এরূপ আগমনকে বলা হয় মধ্য স্বরাগম। রত্ন > রতন, স্বপ্ন > স্বপন, গ্রাম > গেরাম, ফিল্ম > ফিলিম, প্রীতি > পিরীতি ইত্যাদি
অন্ত্যস্বরাগম কোনো কোনো সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে। এরূপ স্বরাগমকে বলা হয় অন্ত্যস্বরাগম। দিশ্ > দিশা, পোখˎত > পোক্ত, বেঞ্চ > বেঞ্চি, সত্য > সত্যি, দুষ্ট > দুষ্টু ইত্যাদি
সমীভবন শব্দমধ্যস্থ দুটি ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্পবিস্তর সমতা লাভ করে। এ বিষয়টিকে বলা হয় সমীভবন।সমীভবন মূলত তিন প্রকার।যথাঃ প্রগত, পরাগত, অন্যান্য। কাঁদনা > কান্না, পদ্ম > পদ্দ, পক্ক > পকˎক, চক্র > চকˎক, পাঁচজন > পাঁজ্জন, জন্ম > জম্ম
বিষমীভবন দুটি সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে। শরীর > শরীল, লাল > নাল, অভিভাবক > অবিভাবক ইত্যাদি।
ধ্বনি বিপর্যয় শব্দের মধ্যে দুটি ব্যঞ্জনের পরস্পর স্থান পরিবর্তন ঘটলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। বাকˎস > বাসকˎ, লাফ > ফাল, পিশাচ > পিচাশ, রিকˎসা > রিসকা ইত্যাদি
অপনিহিতি পরের ই-কার ও উ-কার আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জন ধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হলে তাকে অপনিহিতি বলে। সত্য > সইত্য, সাধু > সাউধ, কাল > কাইল, বাক্য > বাইক্য, আজি > আইজ, চারি > চাইর ইত্যাদি।
অভিশ্রুতি বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে অভিশ্রুতি বলে শুনিয়া > শুইন্যা > শুনে, বলিয়া > বইল্যা > বলে, করিয়া > কইর‌্যা > করে ইত্যাদি।
স্বরসঙ্গতি একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। দেশি > দিশি, বিলাতি > বিলিতি, মুলা > মুলো ইত্যাদি।
ব্যঞ্জনচ্যুতি পাশাপাশি সমউচ্চারনের দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে তার একটি লোপ পায়। এরূপ লোপকে ব্যঞ্জনচ্যুতি বলে। বড় দাদা > বড়দা, বউ দিদি > বউদি ইত্যাদি।
ব্যঞ্জন বিকৃতি শব্দের মধ্যে কোনো কোনো সময় কোনো ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি ব্যবহৃত হয়। একে ব্যঞ্জন বিকৃতি বলে। কবাট > কপাট, ধোবা > ধোপা, ধাইমা > দাইমা ইত্যাদি।
অন্তর্হতি পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্তর্হতি বলে। ফাল্গুন > ফাগুন, ফলাহার > ফলার ইত্যাদি।
দ্বিত্ব ব্যঞ্জন কখনো কখনো জোর দেওয়ার জন্য শব্দের আন্তর্গত ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়, একে বলে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা বর্ণদ্বিত্ব। বড় > বড্ড, পাকা > পাক্কা, সকাল > সক্কাল মুলুক > মুল্লুক ইত্যাদি।
অসমীকরণ একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দুর করার জন্য মাঝখানে যখন স্বরধ্বনি যুক্ত হয়, তখন তাকে অসমীকরণ বলে। ধপ+ধপ > ধপাধপ, টপ + টপ > টপাটপ ইত্যাদি।

চাকরীর পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি

☛ যেগুলো কন্ঠধ্বনি - ক খ গ ঘ ঙ।
☛ নাসিক্য ধ্বনি - ঙ ঞ ণ ন ম।
☛ উষ্মধ্বনি - শ ষ স হ।
☛ পরাশ্রয়ী ধ্বনি - ং ঃ ঁ ।
☛ তলব্য ধ্বনি - চ ছ জ ঝ ঞ।
☛ ওষ্ঠ্য ধ্বনি - প ফ ব ভ ম।
☛ অন্তঃস্থ ধ্বনি - য র ল ব।
☛ তাড়নজাত ধ্বনি - ড় ঢ়।
☛ পার্শ্বিক ধ্বনি - ল।
☛ কোনটি মহাপ্রাণ ধ্বনি - ঝ।
☛ ’Prothesis’ এর বাংলা প্রতিশব্দ - আদি স্বরাগম।
☛ বিভক্তিহীন নাম শব্দকে বলে - প্রাতিপদিক।
☛ বাক্যের মৌলিক উপাদান - শব্দ।
☛ ভাষার মূল উপাদান - ধ্বনি।
☛ ক বর্গের ক থেকে ঘ পর্যন্ত ধ্বনিগুলি - কন্ঠমূলীয়।
☛ ঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনি - ঝ।
☛ বাংলা ভাষায় পরাশ্রয়ী ধ্বনি - ৩টি।
☛ ’কাঁদনা > কান্না’ যে ধরনের ধ্বনি পরিবর্তনের উদাহরন - সমীভবন।
☛ ঘোষ অল্পপ্রাণ বর্ণ - ড।
☛ ধ্বনি বিপর্যয়ের উদাহরন - পিশাচ > পিচাশ।
☛ ধ্বনির পরিবর্তন - তিন প্রকার।
☛ Phoneme শব্দের অর্থ - ধ্বনিমূল।
☛ Aponeme এর অর্থ - অপিনিহিতি।
☛ রত্ন > রতন হওয়ার সন্ধি সূত্র - স্বরভক্তি।
☛ স্বরাগমের উদাহরন -পিরীতি।
☛ বর্ণ এর প্রতীক হলো - ধ্বনি।
☛ গ্রাম > গেরাম - এখানে যা ঘটেছে - স্বরাগম।
☛ যেটি মৌলিক স্বরধ্বনি - ই।
☛ বাংলায় বর্গীয় ধ্বনি - ২৫টি।
☛ ক্রিয়ার মূলকে বলে - ধাতু।
☛ ফলাহার > ফলার হয়েছে, যাকে বলে - অন্তর্হতি।
☛ বাংলা ভাষায় তিনটি মৌলিক অংশ রয়েছে - ধ্বনি, শব্দ, বাক্য।
☛ যেটি নাসিক্য ধ্বনি - ম।
☛ বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা - ২৫টি।
☛ যে দুটি মূল স্বরধ্বনি নয় - ঐ ঔ।
☛ অক্ষর উচ্চারণের কাল পরিমাণকে বলে - মত্রা।
☛ যে দুটি মহাপ্রাণ ধ্বনি - খ ঝ।
☛ ’র’ যে জাতীয় ধ্বনি - কম্পনজাত ধ্বনি।
☛ বাংলা ভাষায় ধ্বনিকে ভাগ করা হয়েছে - ২টি শ্রেনীতে ( স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি)
☛ ক থেকে ম পর্যন্ত ২৫টি ধ্বনি কে বলা হয় - স্পর্শধ্বনি।
☛ ধ্বনি উচ্চারণের প্রত্যঙ্গসমূহকে একত্রে বলা হয় - বাগযন্ত্র।
☛ মুখবিবরের ছাদকে বলা হয় - তলু।
☛ বাংলা ভাষায় মোট মৌলিক ধ্বনি - ৩৭টি ( স্বরধ্বনি ৭টি এবং ব্যঞ্জনধ্বনি ৩০টি)।
☛ যে সকল ধ্বনি পুরোপুরি উচ্চারিত হয় না তাদের বলা হয় - অর্ধম্বর।
☛ বাংলা ভাষায় অর্ধম্বরধ্বনি - ৪টি ( ই উ এ ও )।
☛ যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না তাকে বলে - অঘোষ ধ্বনি ।
☛ যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় তাকে বলে - ঘোষ ধ্বনি ।
☛ যে ধ্বনি উচ্চারণে নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় তাকে বলা হয় - মহাপ্রাণ ধ্বনি।
☛ যে ধ্বনি উচ্চারণে নিঃশ্বাস অল্প আকারে সংযোজিত হয় তাকে বলা হয় - অল্পপ্রাণ ধ্বনি।


✤ গুরুত্বপূর্ণ MCQ প্রশ্নউত্তর ✤


১। ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ বইটি কোন হরফে মুদ্রিত হয়?

[সমন্বিত ১০ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান (২০২৩), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৫), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (২০১০)]

২। ব্যাকরণে সার্বিক আলোচ্য বিষয় কয়টি?

[সমন্বিত ৮ ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (২০২৩), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (২০১২)]

৩। ‘লেক্সিকোগ্রাফি’ কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে?

[দুদক (২০২২), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৩), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৪)]

৪। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত মৌলিক স্বরধ্বনি কয়টি?

[বিসিএস ৩৭তম, বিসিএস ৩৫তম, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (২০২২)]

৫। বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে কোন প্রাচীন লিপি থেকে?

[বিসিএস ১৪তম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৫), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (২০২০)]

বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এবং একটি আদর্শ ও নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন সকলেরই থাকে। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতা এ দুটি সম্পুর্ণ বিপরীতমূখী। ভবিষ্যৎ গড়ার বিভিন্ন পথ থাকলেও প্রথম সারিতেই থাকে একটি ভাল চাকরির প্রত্যাশা। এখনকার ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরি ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত ও হতশাগ্রস্থ হচ্ছে চাকরি প্রত্যাশি শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বই-পত্র এবং ইন্টারনেট থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ও আপডেট তথ্যাবলী দিয়ে এই সাইট-টি সজ্জিত করা হয়েছে।